একাধিক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সংবাদ শিরোনাম হওয়া মঈনুলের অভিযোগের ভিত্তিতে হাজী শফিকুল ইসলাম ও শিহাবী নামে দুই ব্যক্তি গ্রেফতার। ক্ষমতার অপব্যবহার নাকি ষড়যন্ত্রের শিকার? বিস্তারিত জানতে ব্লগটি পড়ুন। লেখক - শিহাবী
বিতর্কিত মঈনুলের অভিযোগের তীর: কাঠগড়ায় দুই নিরীহ ব্যক্তি?
সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় সংবাদমাধ্যমে বারবার উঠে আসা নামোঃ মাইনুল হোসেন (মঈনুল)। ৫০ বছর বয়সী এই ব্যক্তি ২০২২ সাল থেকে একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন। ইটভাটা থেকে ইট চুরি, গাড়ি চুরি, এমনকি ভেকু চুরি করতে গিয়ে জনতার হাতে ধরা পড়ার মতো ঘটনাও তার নামের সাথে জড়িয়েছে।
একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সূত্রে জানা যায়, মঈনুল এর আগেও বহুবার আইন ভঙ্গ করেছেন। কখনও ইট চুরি করতে গিয়ে গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছেন, আবার কখনও গাড়ি চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছেন। শুধু তাই নয়, সহযোগীদের নিয়ে ইঞ্জিন বোটে করে ইটভাটা থেকে এস্কেভেটর চুরি করার চেষ্টার সময়ও তিনি জনতার হাতে ধরা পড়েন।
এই ঘটনায় ইটভাটার মালিক বাদী হয়ে সাভার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন, যেখানে মঈনুলসহ মোট ছয়জনকে আসামি করা হয়। জেল খেটে জামিনে বেরিয়ে আসার পর, মঈনুল স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তির প্ররোচনায় তার মারধরের একটি ভিডিও এবং শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখিয়ে সাভার থানায় পাল্টা একটি হত্যাচেষ্টার মামলা দায়ের করেন।
হত্যাচেষ্টা মামলার জালে নিরীহ দু'জন
অবাক করার বিষয় হলো, এই হত্যাচেষ্টা মামলার ৬ নং আসামি হাজী শফিকুল ইসলাম এবং ৭ নং আসামি করা হয়েছে তার বন্ধু শিহাবীকে। মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়েছে যে শিহাব এবং হাজী শফিক মঈনুলকে মারার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন, অথচ তারা এই ঘটনার কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন।
গত ১৬ই মে, বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক সাড়ে নয়টা-দশটার দিকে কাউন্দিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কয়েকজন পুলিশ সদস্যসহ হাজী শফিক এবং শিহাবীর অফিসে এসে তাদের গ্রেফতার করে নিয়ে যান।
ঘুষ নাকি ক্ষমতার অপব্যবহার?
শিহাবীর গ্রেফতারের খবর শুনে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং তাদের আত্মীয়-স্বজন থানায় ছুটে আসেন এবং দেনদরবার করার চেষ্টা করেন। তবে তাদের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। শিহাবীর ভাষ্য অনুযায়ী, প্রশাসনের এমন তড়িৎ পদক্ষেপ আগে কখনো দেখা যায়নি – ১৫ তারিখে মামলা এবং ১৬ তারিখেই গ্রেফতার।
তাদের প্রশ্ন
একজন চোর এবং একাধিক মামলার আসামির কথার ভিত্তিতে প্রশাসন এত দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারে? নাকি এর পেছনে অন্য কোনো কারণ রয়েছে? তাদের ধারণা, উচ্চপদস্থ কোনো কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে পুলিশ এই মামলা নিতে বাধ্য হয়েছে। এমনকি, সাভার থানার ওসি সাহেবও নিজেকে অসহায় বলে প্রকাশ করেছেন।
আইনি লড়াই এবং জামিন
আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে শিহাবীকে পুলিশের সাথে থানায় যেতে হয়। সারারাত লকআপে থাকার পর, পরদিন দুপুরে তাদের কোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়। শুক্রবার কোর্ট বন্ধ থাকলেও বিশেষ কোর্টে হাজির করা হলে, আত্মীয়-স্বজন এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের চেষ্টায় জামিন শুনানি সম্ভব হয়। অল্প বয়সী এক মহিলা ম্যাজিস্ট্রেট তাদের আইনজীবীদের বক্তব্য শুনে জামিন মঞ্জুর করেন।
কোর্টের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত আটটা বেজে যায়। প্রায় ২২ ঘণ্টার এই আইনি সফরে শিহাবীকে অপরাধীর মতো বিচারের মুখোমুখি হতে হয়, যদিও তিনি বুঝতে পারছেনা তার অপরাধটা আসলে কী ছিল।
প্রশ্নবোধক প্রশাসন
শিহাবীর প্রশ্ন, একজন চোর এবং ডাকাতি মামলার আসামির কথার উপর ভিত্তি করে দেশের প্রশাসন কি এমন পদক্ষেপ নিতে পারে? এর পেছনে কি অন্য কোনো বড় কারণ রয়েছে? এর আগেও ২০২১ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় এমপির অভিযোগে র্যাব তাকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল এবং ২৪ ঘণ্টা পর ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল।
এই ঘটনাগুলোতে কার কী লাভ হয়, তা তিনি জানেন না। তবে তিনি মনে করেন, সমাজে অনেক প্রভাবশালী লোক রয়েছে যারা তাকে দেখতে পারে না। প্রশ্ন হলো, এই ঘটনার এখানেই সমাপ্তি ঘটবে, নাকি ভবিষ্যতে আরও এমন অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে?
এই বিষয়ে আপনার মতামত কী? কমেন্ট করে জানান।
FAQ:
প্রশ্ন: মোঃ মাইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ রয়েছে?
উত্তর: মঈনুলের বিরুদ্ধে ইট চুরি, গাড়ি চুরি এবং এস্কেভেটর চুরির মতো একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
প্রশ্ন: হাজী শফিক এবং শিহাবীকে কেন গ্রেফতার করা হয়েছিল?
উত্তর: মঈনুলের দায়ের করা একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় হুকুমদাতা হিসেবে অভিযোগের ভিত্তিতে হাজী শফিক এবং শিহাবীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
প্রশ্ন: হাজী শফিক এবং শিহাবীর কি জামিন হয়েছে?
উত্তর: হ্যাঁ, আদালতের মাধ্যমে হাজী শফিক এবং শিহাবীর জামিন মঞ্জুর হয়েছে।
প্রশ্ন: শিহাবীর মতে, কেন তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে?
উত্তর: শিহাবীর ধারণা, সমাজে প্রভাবশালী কিছু লোক তাকে দেখতে পারে না এবং তাদের প্ররোচনায় এমনটা হয়েছে।
প্রশ্ন: প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে হাজী শফিক এবং শিহাবীর প্রধান অভিযোগ কী?
উত্তর:হাজী শফিক এবং শিহাবীর প্রধান অভিযোগ হলো, একজন বিতর্কিত ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে কোনো প্রকার যাচাই-বাছাই ছাড়াই পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছেন।
0 Comments