এক ভয়াবহ সন্ধ্যা। একটি কুকুরকে তাড়া করছে এক বুনো চিতাবাঘ। প্রাণ ভয়ে কুকুরটি ছুটে গিয়ে জানালা দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে এক বাথরুমে ঢুকে পড়ে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, বাথরুমটির দরজা বাইরে থেকে তালাবদ্ধ ছিল।
![]() |
চিতাবাঘ ও কুকুরের স্বাধীনতার এক অনবদ্য গল্প |
চিতাবাঘটিও তার ঠিক পেছনেই বাথরুমে ঢুকে পড়ে। মুহূর্তেই দুজনেই বন্দী হয়ে যায় সেই ছোট্ট ঘরে।
চিতাবাঘ ক্ষুধার্ত ছিল। চাইলে সহজেই কুকুরটিকে তারাতের খাবার বানাতে পারত। কিন্তু কুকুরটি এক কোণে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বসে ছিল, আর চিতাবাঘ ছিল আরেকোণে শান্ত, নিস্তব্ধ। কোনো আক্রমণ হয়নি। কোনো শব্দ হয়নি। এভাবে প্রায় বারো ঘণ্টা তারা ছিল একে অপরের বিপরীত কোণে, সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে।
শেষ পর্যন্ত বনবিভাগ এসে ট্র্যাঙ্কুলাইজার দিয়ে চিতাবাঘটিকে নিয়ন্ত্রণে আনে।
প্রশ্ন উঠতেই পারে—চিতাবাঘ কেন কুকুরটিকে খেল না?
বন্যপ্রাণী গবেষকরা বলেন, বন্যপ্রাণীরা স্বাধীনতার প্রতি খুবই সংবেদনশীল। যখন তারা হঠাৎ করে বুঝতে পারে, ‘আমি এখন বন্দী’, তখন তাদের মধ্যে এক ধরনের মানসিক ভেঙে পড়া শুরু হয়। এই ভেতরের যন্ত্রণা তাদের স্বাভাবিক আচরণ, এমনকি খাদ্যগ্রহণের ইচ্ছাও দমন করে ফেলে।
এই চিতাবাঘটির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। বন্দিত্বের কষ্ট তার ক্ষুধাকে হারিয়ে দিয়েছিল।
এই গল্প আমাদের জন্য কী শেখায়?
আমরা মানুষ হিসেবে অনেক কিছু চাই—আরাম, বিলাসিতা, নাম, খ্যাতি। কিন্তু আমরা প্রায়ই ভুলে যাই, প্রকৃত সুখ আসে স্বাধীনতা থেকে—চিন্তার স্বাধীনতা, কাজের স্বাধীনতা, নিজের মতো বাঁচার স্বাধীনতা।
একটা চিতাবাঘও যদি বন্দিত্বে তার স্বাভাবিক আচরণ হারিয়ে ফেলে, তবে আমরা মানুষ হয়ে কিভাবে সুখী হবো যদি আমাদের চিন্তা, মত, ও জীবনযাপন অন্যের ইচ্ছায় চলতে হয়?
জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ স্বাধীনতা।
তাই অন্যের স্বাধীনতাকে সম্মান করুন, নিজের স্বাধীনতাকে রক্ষা করুন, এবং সবার জন্য এমন এক সমাজ গড়ে তুলুন যেখানে মানুষ খোলা মনে বাঁচতে পারে।
📌 শেষ কথায়:
স্বাধীনতা ছাড়া সুখ নেই। আর সুখ ছাড়া জীবন কেবল বেঁচে থাকা মাত্র।
0 Comments