আজ ২৯শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৬ই জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি। ১২ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
মৌমাছির ডানার কম্পন থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে চীনের তৈরি নতুন PEH ডিভাইস। টেকসই শক্তির দিগন্তে নতুন সম্ভাবনা।
![]() |
মৌমাছির গুঞ্জনে বিদ্যুৎ উৎপাদন |
মৌমাছির ডানার কম্পনকে শক্তিতে রূপান্তর
চীনের বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এমন এক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন যা মৌমাছির প্রাকৃতিক গুঞ্জন—অর্থাৎ ডানার কম্পন ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম। মাত্র ৪৬ মিলিগ্রাম ওজনের এই পিজোইলেকট্রিক এনার্জি হার্ভেস্টার (PEN) মৌমাছির উড়ন্ত অবস্থায় তার ডানার নড়াচড়া থেকে শক্তি সংগ্রহ করে।
ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় দেখা গেছে, এই ডিভাইসটি সর্বোচ্চ ৫.৬৬ ভোল্ট আউটপুট দিতে সক্ষম এবং প্রতি ঘন সেন্টিমিটারে ১.২৭ মিলিওয়াট শক্তি ঘনত্ব উৎপন্ন করে, যা এই ধরণের অন্যান্য ইনসেক্ট-ভিত্তিক ডিভাইসের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর।
মৌমাছির আচরণে প্রভাবহীন
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ডিভাইসটি সংযুক্ত থাকা অবস্থায় মৌমাছির স্বাভাবিক উড়ার ক্ষমতায় কোনো বিঘ্ন ঘটে না। এমনকি তারা উল্টে গেলেও মাত্র দুই সেকেন্ডের মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। বিজ্ঞানীরা ডিভাইসটির নকশা এমনভাবে তৈরি করেছেন যাতে এটি মৌমাছির প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিন্দুর সঙ্গে মিলে যায়, ফলে উড়ন্ত অবস্থায় কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় না।
PDF ফিল্মের অভিনব ব্যবহার
এই ডিভাইসটি নমনীয় ও হালকা পলিভিনাইলিডিন ফ্লোরাইড (PDF) ফিল্ম দিয়ে তৈরি, যারেজোন্যান্স ফ্রিকোয়েন্সি মৌমাছির থোরাক্সের কম্পনের (প্রতি সেকেন্ডে ২১০–২২০ বার) সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ফলে কম্পনের প্রতিটি তরঙ্গ থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণে বিদ্যুৎ আহরণ করা সম্ভব হয়।
সাইবোর্গ প্রযুক্তির বাস্তব প্রয়োগ
এই উদ্ভাবন একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়—বিশেষ করে সাইবোর্গ ইনসেক্ট প্রযুক্তির ক্ষেত্রে। গবেষণায় বলা হয়েছে, এই প্রযুক্তি ভারী ব্যাটারির প্রয়োজনীয়তা দূর করে, ডিভাইসের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং দীর্ঘস্থায়ী নজরদারি ও অনুসন্ধান কার্যক্রমে কার্যকর হতে পারে।
সান ইয়াত-সেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জিয়ানিং উ বলেন, “এই পদ্ধতিটি ভারী ব্যাটারির প্রয়োজনীয়তা দূর করে এবং পোকামাকড় সাইবোর্গ প্রযুক্তির বাস্তব প্রয়োগকে বাস্তবসম্মত করে তোলে।” গবেষক দল এখন ড্রাগনফ্লাই ও প্রজাপতির ওপরও এই প্রযুক্তির প্রয়োগের পরিকল্পনা করছেন।
FAQ:
প্রশ্ন: এই PEN ডিভাইস কীভাবে কাজ করে?
উত্তর: মৌমাছির ডানার প্রাকৃতিক কম্পনকে ব্যবহার করে এটি বিদ্যুৎ উৎপাদন করে পিজোইলেকট্রিক উপাদানের মাধ্যমে।
প্রশ্ন: এটি কি মৌমাছির উড়ার ক্ষমতা প্রভাবিত করে?
উত্তর: না, গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে এটি মৌমাছির স্বাভাবিক চলাফেরায় কোনো ব্যাঘাত ঘটায় না।
প্রশ্ন: এই প্রযুক্তির মূল উপাদান কী?
উত্তর: নমনীয় ও হালকা PDF ফিল্ম, যার কম্পন হার মৌমাছির থোরাক্সের সাথে মিলিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
প্রশ্ন: এই উদ্ভাবনের বাস্তব ব্যবহার কোথায় হতে পারে?
উত্তর: পরিবেশ পর্যবেক্ষণ, দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া ও ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে অনুসন্ধান কাজে ব্যবহারযোগ্য ইনসেক্ট সাইবোর্গ তৈরি করা সম্ভব।
প্রশ্ন: ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি আর কোন পোকামাকড়ে প্রয়োগ করা হবে?
উত্তর: গবেষকরা ড্রাগনফ্লাই ও প্রজাপতির ওপর প্রয়োগের জন্য কাজ শুরু করেছেন।
এই নতুন প্রযুক্তি শুধু মৌমাছির গুঞ্জনকেই কাজে লাগায়নি, বরং পরিবেশবান্ধব শক্তি উৎপাদনে এক নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে—যেখানে প্রকৃতি ও প্রযুক্তি হাত মিলিয়ে গড়ছে টেকসই ভবিষ্যৎ।
0 Comments